আমেরিকার ডলার তার আধিপত্য হারাছে
এম এম মুসা
দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ পরবর্তী ডলার ছিল বিনিয়োগকারীদের আস্থার প্রতীক। এখন শুধু বিনিয়োগকারী নয় দেশ গুলির দুচিন্তার অপর নাম হয়ে দাড়িয়েছে ডলার। এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের পটপরিবর্তন এবং বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের ফলে আমেরিকার অর্থনীতিতে যে ধাক্কা লেগেছে তার প্রভাবে ডলারের চিরাচরিত অবস্থার অবনতি হয়েছে। অন্যান্য মুদ্রার তুলনায় ডলারের মূল্যমান কমেছে। ফলে যে সমস্ত বিনিয়োগকারীরা ডলারের বিনিয়োগ করেছে তারা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। গত আগষ্ট মাসে আমেরিকার আমদানী রপ্তানীর ঘাটতি কমার ফলে ডলারের মূল্যমান দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে। এখনও ডলারের মূল্যমান অন্যান্য মুদ্রার তুলনায় ১৪ শতাংশ কম। এ অবস্থার পেক্ষিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ রির্জাভ মুদ্রার জন্য ডলারেরর বিকল্প খুঁজছে। গত ০১ অক্টোম্বর দক্ষিণ কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড এবং পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশ গুলির কেদ্রিয় ব্যাংক গুলির প্রধানরা এক আলোচনা সভায় মিলিত হয়ে সিদ্ধান্ত নেয় যে ডলারের মূল্যমান পতনের জন্য তাদের নিজস্ব মূদ্রার মান দ্রুত বাড়াবে। বর্তমান সময়ের ডলারের মূল্য পতন অর্থনৈতিক সংকটকে আরো গভীর করছে। এই রকম অবস্থা বেশি দিন চলতে থাকলে দেশ গুলি নিজেদের মত করে ব্যবস্থা গ্রহন করতে বাধ্য হবে যেমনটি ১৯৯০ সালে করেছিল পূর্ব এশিয়ার দেশগুলি। দীর্ঘ মেয়াদী ডলারের মূল্যমান পতনের ফলে রপ্তানীকারক দেশ গুলির আয় কমে যাবে এবং আমদানী পণ্যের মূল্য বেড়ে যাবে। পাশাপাশি সরকারি ঋণ পরিশোধের খরচ ও সুদের হার বেড়ে যাবে যার ফলে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা করার জন্য যে পদক্ষেপ গুলি গ্রহন করা হয়েছিল তা কোন কাজে আসবে না। বর্তমান অর্থনৈতিক দিক দিয়ে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশ হিসাবে পরিগণিত চীনের ক্ষতির পরিমান বেশি হবে। চীন রপ্তানী বৃদ্ধির লক্ষ্যে সব সময়ে তাদের মুদ্রার মান ডলার হতে কমিয়ে রাখে। এমতাবস্থায় ডলারের মূল্যমান কমে যাওয়ায় চীনের মুদ্রার মান বেড়ে গেছে ফলে বিশ্ব বাজারে চীনের পণ্যের দাম বেড়ে গেছে যার প্রভাবে চীনের রপ্তানীর পরিমানও কমে গেছে। ইতিমধ্যে চীন সহ অন্যান্য দেশগুলি তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ধরে রাখার জন্য বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহনের কথা বিবেচনা করছে। এদিকে বর্তমান বছরের আমেরিকার বাজেট ঘাটতির পরিমান মোট দেশজ উৎপাদনের ১০ শতাংশ অতিক্রম করেছে। আমেরিকা ডলারকে জনপ্রিয় এবং তার মূল্যমান ধরে রাখার জন্য মুক্ত বাজার নীতি হতে সরে এসে হস্তক্ষেপের নীতির দিকে অগ্রসর হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আমেরিকার ট্রেজারী বিভাগের কর্মকর্তাগন।
পৃথিবীর প্রায় সকল দেশই বৈদেশিক মুদ্রার রির্জাভ হিসাবে ডলারকে তাদের প্রথম পছন্দ হিসাবে বেছে নিত। কিন্তু বর্তমানে ডলারের মূল্য ঘনঘন উঠানামা করায় দেশ গুলি লোকসানের সমুখীন হচ্ছে। ফলে বিভিন্ন দেশ বৈদেশিক মুদ্রার রির্জাভের ক্ষেত্রে ডলারের বিকল্প খোঁজা শুরু করেছে। এক্ষেত্রে তাদের পছন্দের তালিকার প্রথমেই রয়েছে ইউরো। এর ফলে ইউরোর মূল্য ইতিমধ্যে বেশ খানিকটা বেড়ে গেছে। এছাড়া বিভিন্ন দেশ ডলার বা ইউরো নয় রির্জাভের ক্ষেত্রে স্বর্ণের প্রতি মনোনিবেশ করছে। দেশ গুলির কাছে বৈদেশিক রির্জাভ হিসাবে ডলারের পরিবর্তে স্বর্ণের কদর বাড়তে শুরু করায় বিশ্ব বাজারে স্বর্ণের মূল্য বেড়ে গেছে। স্বর্ণের দিকে বিশ্ব অর্থনীতি ঝুঁকে পড়ার অন্যতম কারন হল ডলারের মূল্যমান কমে যাওয়া। অর্থনৈতিক সংকট পরবর্তী আমেরিকা ১ লাখ ২০ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের প্রনোদনা প্রাকেজ ঘোষনা করার কারনে ডলারের ইনডেক্স ভ্যালু ৮০ শতাংশ কমেছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় বন্ড ফান্ড লেনদেনকারী কোম্পানী পিআইএমকো এর ম্যানেজার বলেন “আমেরিকার অর্থনীতিতে বিপুল পরিমান অর্থ প্রবেশ করার ফলেই ডলারের মূল্যমান কমেছে” বর্তমানে চীন এবং রাশিয়া বৈদেশিক মুদ্রার রির্জাভের সবচেয়ে বড় দুইটি দেশ। উভয় দেশই বর্তমান রির্জাভ এর ক্ষেত্রে ডলারের বিকল্প স্থিতিশীল মুদ্রা খুঁজছে।
ইউরোপিয়ান দেশ সমূহে অভিন্ন মুদ্রা ইউরো চালু হওয়ার পরে ডলারের সাথে এক প্রতিযোগিতা শুরু হয় সর্বজনস্বীকৃত মুদ্রা হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভের। কিন্তু আমেরিকার একক আধিপত্যে ইউরো বিশ্বে তার অবস্থান তৈরি করতে পারে নাই। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ পরবর্তী ডলারই হল এক মাত্র সর্বজনবিদীত মুদ্রা। বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের পেক্ষাপটে বিশ্বে আমেরিকার অর্থনীতি দাপুটে প্রভাব কমতে শুরু করছে। অর্থনৈতিক সংকটের ধাক্কা সামলাতে আমেরিকা যখন হিমসিম খাচ্ছে ঠিক সেই মূহূর্তে বিশ্বের ধনী দেশ গুলি ডলার হতে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। ডলার সর্বজনগৃহীত মুদ্রা হওয়ায় আমেরিকার অর্থনীতির অবস্থা খারাপ হলে তার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব সমগ্র বিশ্বের বিশেষ করে ডলারে লেনদেনকারী দেশ গুলির উপর পড়ে। বর্তমানে ডলারের মূল্য ঘনঘন উঠানামা করায় শিল্পোন্নত দেশ গুলি তাদের রির্জাভ এবং আমদানী রপ্তানীতে ডলারের বিকল্প খুঁজতে থাকে। এই প্রেক্ষিতে ইউরো তার অবস্থান শক্ত করতে চাচ্ছে। পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশ সমূহ রির্জাভ হিসাবে আমেরিকান ডলার রাখত। কিন্তু দেশ সমূহ ডলার হতে সরে এসে বিকল্প মুদ্রার সন্ধান করছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু দেশ রির্জাভ হিসাবে ইউরো রাখতে শুরু করেছে।
মধ্যপ্রাচ্যের সমসাময়িক অর্থনৈতিক ইতিহাসে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ যে বদল ঘটেছে, তা হলো উপসাগরীয় আরব দেশগুলো তেল বেচাকেনায় ডলারের ব্যবহার বন্ধ করার পরিকল্পনা করছে। ডলারের পরিবর্তে জাপানি ইয়েন, চীনা ইউয়ান, ইউরো, সোনা ও উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের দেশগুলোর জন্য পরিকল্পিত একীভূত মুদ্রাসহ একগুচ্ছ মুদ্রার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এই পরিকল্পনায় এসব দেশের সঙ্গে আছে চীন, রাশিয়া, জাপান ও ফ্রান্স।এই পরিকল্পনা এগিয়ে নিতে রাশিয়া, চীন, জাপান ও ব্রাজিলে অর্থমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্ণররা ইতিমধ্যে গোপনে বেশ কিছু বৈঠক করেছেন। এতে উলে−খযোগ্য অগ্রগতি ঘটলে, তেলের দরদাম আর ডলারে নির্ধারণ করা হবে না। উপসাগরীয় আরব ও হংকংয়ের চীনা ব্যাংকিং খাতের সূত্র থেকে এসব পরিকল্পনার সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে। সোনার মূল্য হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার পিছনে কারন গুলি হল ডলারের মূল্য পতন, তেলের মূল্য পরিশোধ এবং দেশ গুলির ডলার রির্জাভের পরিবর্তন। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে যে সর্বজনস্বীকৃত মুদ্রা হিসাবে ডলার তার কতৃত্ব হারাছে।
মার্কিনিরা এসব বৈঠক অনুষ্ঠানের কথা জানে, যদিও বিস্তারিত তথ্য এখনো তারা পায়নি। তাদের এত দিনকার অনুগত জাপান ও উপসাগরীয় আরব দেশগুলো এতে জড়িত। মুদ্রাবিষয়ক বৈঠকের প্রেক্ষাপটে মধ্যপ্রাচ্যে চীনের সাবেক বিশেষ দূত সান বিগান সতর্কবাণী উচারণ করেছেন। মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তার ও তেল বিষয়ে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিভেদ গভীরতর হওয়ার ঝুঁকি আছে। এশিয়া অ্যান্ড আফ্রিকা রিভিউকে তিনি বলেছেন, ‘দ্বিপক্ষীয় বিবাদ ও সংঘাত এড়ানো অসম্ভব। জ্বালানি স¡ার্থ ও নিরাপত্তার প্রশ্নে মধ্যপ্রাচ্যে যে বৈরিতা চলছে তার ওপর নজরদারি আমরা তো কমাতে পারব না।’ এ কথা যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের তেলকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক যুদ্ধের ভবিষ্যদ্বাণীর মতো মনে হয়। অর্থনৈতিক যুদ্ধ এ অঞ্চলের সংঘর্ষকে আবার পরাশক্তির শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে পরিণত করবে। যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় চীনের তেল ব্যবহারের পরিমাণ ক্রমে বাড়ছে, কারণ চীনের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি-প্রক্রিয়া জ্বালানি-সাশ্রয়ী নয়। চীনা ব্যাংকিং খাতের সূত্র থেকে জানা গেছে, ডলার থেকে সরে যাওয়ার সুযোগে সোনাও হতে পারে মধ্যবর্তী সময়ের মুদ্রা। যদি তেল রপ্তানীকারক দেশ গুলি মূল্য পরিশোধের যোগ্য হিসাবে ডলার গ্রহন না করে তবে আমেরিকার অর্থনীতিতে যে ধাক্কা লাগবে তা সামলাতে দেশটি পারবে কিনা তাই এখন দেখার বিষয়। আবুধাবি, সৌদি আরব, কুয়েত ও কাতারের এই চারটি দেশে বর্তমানে ২০ হাজার ১০০ কোটি ডলার পরিমাণ সম্পত্তি সংরক্ষিত আছে। চলমান বিশ¡ অর্থনৈতিক মন্দার সঙ্গে সঙ্গে আমেরিকার অর্থনৈতিক শক্তি ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে বলে পরোক্ষভাবে স্বীকার করেছেন বিশ¡ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট রবার্ট জোয়েলিক। ‘এই সংকটের ফলে হয়তো অর্থনৈতিক শক্তির নতুন মেরুকরন এবং পরিবর্তিত অর্থনৈতিক ক্ষমতা সম্পর্ক স¡ীকৃতি পাবে’ এ কথা তিনি সম্প্রতি বলেছেন ইস্তাবুলে আইএমএফ ও বিশ¡ব্যাংকের সভার প্রাক্কালে। আসলে নতুন অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে চীনের উত্থান ও এর সঙ্গে বিশ¡ অর্থনৈতিক ব্যবস্থাতে আমেরিকার হস্তক্ষেপের ক্ষমতার ফলে তেল উৎপাদক ও তেলের ভোক্তা দেশগুলোর তিক্ত অভিজ্ঞতা যুক্ত হওয়ায় উপসাগরীয় দেশগুলোকে সঙ্গে নিয়ে এই চলতি আলোচনার সূচনা। ডলার বাদে অন্য মুদ্রায় তেল ক্রয়ের বিষয়ে ব্রাজিল ও ভারত আগ্রহ দেখিয়েছে। এ ক্ষেত্রে সবার চেয়ে চীনের উৎসাহ বেশি বলে মনে হয়। মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে দেশটির বিপুল বাণিজ্য হয়। চীনের মোট তেলের ৬০ শতাংশই আমদানি করা হয় মধ্যপ্রাচ্য এবং রাশিয়া হতে। ইরাক যুদ্ধের পূর্বে চীন ইরাক হতে তেল আমদানীতে বিশেষ সুবিধা পেয়ে থাকত। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে সেই সুবিধা এখন পর্যন্ত বন্ধ আছে। ইরান তেল পরিশোধন ক্ষমতা বাড়ানো ও গ্যাস সম্পদের উন্নতি সাধনের জন্য চীনের সঙ্গে ২০০৮ সাল থেকে ৮০০ কোটি ডলারের চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছে। এছাড়া সুদানের সঙ্গে চীনের তেলবিষয়ক চুক্তি আছে। অন্যদিকে লিবিয়ার সঙ্গে তেলের দামে ছাড় পাওয়ার বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চালাচ্ছে চীন।
তা ছাড়া, মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিটি দেশের মোট আমদানির কমপক্ষে ১০ শতাংশ চীন থেকে আসে। ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সভাপতি জাঁ-ক−দ ত্রিশে সম্প্রতি বেইজিংকে ডলারের দরপতনের বিপরীতে ইউয়ানের মূল্যবৃদ্ধি করতে আহ¡ান জানিয়েছেন। তিনি আশা করেন এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রানীতির ওপর চীনের নির্ভরশীলতা হ্রাস পাবে ও বিশ¡ অর্থনীতির ভারসাম্য পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে এবং ইউরোর ওপর ঊধ্বর্মুখী চাপ কমবে। ত্রিশের এ আহ¡ান চীনের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ক্ষমতার ইঙ্গিত দেয়।দ্বিতীয় বিশ¡যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ের ব্রেটন-উডস ঐকমত্য, যা আধুনিক বিশ¡ অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ভিত রচনা করে, ওয়াশিংটনের কর্তৃত্বের সঙ্গে আমেরিকার ব্যবসায়িক অংশীদারদের খাপ খাইয়ে নিতে বাধ্য করে। আর কালে কালে প্রতাপশালী বৈশি¡ক রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে ডলারের আধিপত্য তৈরি হয়। চীনারা মনে করে, মার্কিনিরা ব্রিটেনকে ইউরোর দিকে ধাবিত হওয়া থেকে সরিয়ে রাখতে সচেষ্ট হয়। এর পিছনে মূল কারণ হিসাবে কাজ করেছে ডলারের স্বকীয়তা ধরে রাখা। এদিকে চীনা ব্যাংকিং খাতের সূত্র জানাচ্ছে, এবার আলোচনা এতদূর এগিয়েছে যে, সেটা আটকে দেওয়া আর কারও পক্ষেই সম্ভব হবে না। আন্তজার্তিক সম্প্রদায় এখন একক মুদ্রা হিসাবে ডলারের পরিবর্তে একগুচ্ছ মুদ্রার কথা চিন্তা ভাবনা করছে। হংকংয়ের এক বিশিষ্ট ব্যাংকার দি ইনডিপেন্ডেন্টকে বলেছেন, ‘শেষে রাশিয়ার রুবলও মুদ্রাগুচ্ছের অন্তর্ভুক্ত হবে। ব্রিটিশরা মাঝখানে আটকে আছে, তারাও ইউরোকে গ্রহণ করবে। তাদের আর কোনো গত্যন্তর নেই, কারণ ডলারের ব্যবহার তারা চালিয়ে যেতে পারবে না।’চীনের অর্থনৈতিক সূত্রগুলোর ধারণা, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ঠিক করা নিয়ে বারাক ওবামা এত ব্যস্ত যে ডলার থেকে অন্যরা মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার কী প্রভাব পড়বে সেদিকে মনোযোগ দিতে পারছেন না। এদিকে ২০১৮ সালের মধ্যে মুদ্রা বদলের সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে।
পিটার্সবার্গে আট জাতি সম্মেলনে মুদ্রার বর্তমান পটপরিবর্তনের প্রবণতা বিষয়ে বেশ আলোচনা হয়েছে। চীনা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ও উচপদস্থ কর্মকর্তারা জোরালো ভাষায় ডলারের বিষয়ে তাঁদের উদ্বেগ জানিয়েছেন। উদ্বেগের কারণ তাঁদের জাতীয় সম্পদের অধিকাংশই ডলারে বিনিয়োগ করা।চীনা এক ব্যাংকার বললেন, ‘এসব পরিকলনা আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক লেনদেনের চেহারা পাল্টে দেবে। যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন নিশ্চয় খুব উদ্বিগ্ন। এই সংবাদ প্রত্যাখ্যানের যে ঝড় বইবে তা থেকেই বোঝা যাবে তারা কতটা উদ্বিগ্ন।’গত মাসের শেষে ইরান ঘোষণা করেছে এখন থেকে দেশটি ডলারের পরিবর্তে ইউরোতে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ রাখবে। ব্যাংকারদের নিশ্চয় মনে আছে, মধ্যপ্রাচ্যে ডলারের পরিবর্তে ইউরোতে তেল বিক্রির সর্বশেষ ঘটনায় কী ঘটেছিল। সাদ্দাম হোসেন ঢাকঢোল পিটিয়ে তাঁর সিদ্ধান্ত ঘোষণার কয়েক মাস পর যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন ইরাকে আক্রমণ করে। এবার আমেরিকা এবং বিট্রেন কিভাবে ডলারের সর্বজনস্বীকৃতী রক্ষা করে তাই দেখার বিষয়।
|